চিরচেনা বাঁশি
বসন্ত রোপন করেছে তোমার আগমন, তবুও
নদী ও সূর্যাস্তে ফেলে ছুটে আসি দূরন্ত উচ্ছ্বাস
বাজাতে ভুলে যাই আমের আটির ভেঁপু;
উড়ন্ত তুলার পেছনে ছোটা ঘামজর্জর শৈশব;
মেলাশেষের চূর্ণিত দৃশ্য—পাখির বাসা ভাঙা।
কী এক আশ্চর্য দ্বিধার করাঘাতে ভুলে থাকি—
মায়ের আঁচল ছোঁয়া মুড়ি-মুড়কি দুপুর,
কিংবা, কলাপাতায় নবান্নের সুখ।
বসন্ত পল্লবিত করেছে তোমার আগমন, তবুও
আমাদের চেতনা যেন এক অন্ধকারের দাস
সময়ের বিভ্রমে ক্রমশ হয়ে উঠছি ধর্ষকামী!
পাতার বাঁশিতে সুর তোলা টলমল চিরসারল্য
যে যার মতো ভাসিয়ে দিয়ে—বণিক বাতাসে।
বৈশাখের নির্মাণশৈলী
ধূলিধূসরিত দিন, দিগি¦দিক ছুটছে মানুষের স্রোত;
সহস্র কৃষ্ণচূড়া আর প্রলম্বিত খরার প্রাচীর ডিঙিয়ে
একবার আমরাও গিয়েছিলাম পাথরের খুব কাছে
আমরা বহুবার গিয়েছিলাম অরণ্যের খুব গভীরে
রহস্যের বুদবুদ চোখে বহুমাত্রিক শিল্প অন্বেষণে।
বিপুল বৈশাখে আরাধনা ছিল ঘনপল্লব, অথচ—
শিল্পের খুন ঝরিয়ে আমাদের নির্মিত সৌধ
কেঁপে উঠেছিল অভাবিত মানবতায়; স্বপ্নবুননের
ইচ্ছেয় রেশমি চুড়ির ঝংকারে মৌন পাহাড়
আহ্বান করেছিলে তুমি, পাহাড়ি জলপ্রপাতে
ফুটিয়ে তুলেছিলে প্রাত্যহিক জীবনের নীলফুল।
দেখো, এতটা খুঁজেও লালপাখির সন্ধান মেলেনি,
বনভ‚মির অন্ধকার চষেও দেখা যায়নি স্বপ্নপালক
আমরা কেবলি পাঠ্য করেছি খরাদগ্ধ উপবন, আর
যৌথ ঠোঁটে নির্মাণ করেছি বৈশাখের শৈলী।
আর ফিরবো না মেঘ
আর ফিরবো না মেঘ—লাভাঘরে তোর;
স্রোত ঠেলে উঠে এলে হলুদ বিকেল
বরং দুঃখনবিশ পাখির চোখে
দেখে নেবো—আশ্চর্য বিভ‚তি;
যতই ঝরুক পাতা, প্রলোভনে তোর।
বিষকাটালির দেহ ভরা পুষ্পরেণু
গোপন ইঙ্গিত যতই পাঠাক
সম্ভাষণ পরিত্যাগ করে এসেছি যখন
ফিরবো না আর—ক্ষত্রিয়ের বেশে।
বৈশাখী ঝড়ের দিন ফুরিয়ে গেলেও
ঋতুর আবির মাখব না আর
থমকে দাঁড়াবো না পথপাশে
আর ফিরবো না মেঘ—স্বপ্নঘরে তোর।